ডঃ ক্যাম্পবলের ম্যালেরিয়া নির্মূলকারী এবং পক্ষিমলসার উৎপাদনকারী বাদুড়ালয়
ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য একজন ডাক্তারের দূরদর্শিতা ও প্রচেষ্টার সাফল্য



(অনুবাদকের কথাঃ ডঃ চার্লস ক্যাম্পবলের এই জীবন চিত্র মূলক ইতিহাসটি মূলত একটি ইংরেজী সংকলন থেকে ভাবানুবাদ করা হয়েছে [১]। ক্যাম্পবল বহু বছর ধরে বহু কষ্টের পর বাদুড়দের দ্বারা মশা তথা ম্যালেরিয়া উৎখাত করতে সফল হয়েছিলেন। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে তাঁর বহু বছরের ধৈর্য্য, অধ্যবসায় এবং কঠোর সংগ্রামের কাহিনীটি প্রকৃতই প্রেরণাদায়ক। অনুবাদটি কয়েক খন্ডে ফেসবুকে পোষ্ট করা হয়েছে। এখানে সম্পূর্ণ লেখাটা দেওয়া হল। মন্তব্য এবং প্রশ্ন স্বাগত। - আনিস রহমান, হামেল্‌সটাউন, পেনসীল্‌ভ্যানীয়া)।

সূচি

সূচি.................................................................................................................................................1
মূল ইতিহাস....................................................................................................................................2
References.................................................................................................................................10
যোগাযোগ.....................................................................................................................................10
প্রশ্নোত্তর........................................................................................................................................10
সমাপনী মন্তব্য...............................................................................................................................11

মূল ইতিহাস

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে টেক্সাসের সান এ্যান্টোনিয়ো শহরের ডঃ চার্লস্‌ ক্যাম্পবল নামক একজন ডাক্তার এবং রোগজীবাণুবিদ বাদুড় পাখীদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য একটি পরীক্ষামূলক কৃত্রিম বাদুড়ালয় (Bat roost) নির্মান করেন। তবে বাদুড়ালয় নির্মানের আসল কারণটি হল এমন একটি রোগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় খুঁজে বের করা, যা বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটায়: ম্যালেরিয়া। তার নিজস্ব বাসস্থান, টেক্সাসে, মশা ও রোগের কারণে অসংখ্য উর্বর ভূমি অনাবাস্য ছিল; এবং ক্যাম্পবল – যিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করতেন – জানতেন যে মশকেরা কি পরিমাণ দূর্ভোগ ঘটায়
Figure 1. ডঃ চার্লস ক্যাম্পবল

শুরুতে ক্যাম্পবল মনে করেছিলেন উত্তরটি সহজই হবেঃ তিনি ভেবেছিলেন প্রচুর সংখ্যক বাদুড়দেরকে আকৃষ্ট করতে হবে; কারণ, বাদুড়েরাই মশার প্রাকৃতিক শিকারী। এব্যাপারে তাঁর মূল প্রতিপাদ্য ছিল, “বাদুরদেরকে কি মৌমাছির মত চাষ করা যেতে পারে? এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের বংশবৃদ্ধি করা যেতে পারে?” এই লক্ষে তিনি বহু বছর ধরে বিভিন্ন আকারের ও বিভিন্ন ধরনের বাক্স জাতীয় বাদুরাগার নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন – কিন্তু সবগুলোই বিফল হয়। তিনি এই বিফলতা থেকে বুঝতে পারেন যে, বাদুড়দের আবাসস্থলের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন – তারা যে কোন এলোপাথাড়ি ভাবে বানানো বাসায় থাকতে পছন্দ করে না।

অকুতোভয় ক্যাম্পবল অবশেষে একটি সমাধান বের করেন। তাঁর সমাধানটি ছিল বড় একটি বাদুড়গৃহ নির্মান করা যার মধ্যে বাদুড়েরা প্রাকৃতিক আবাসস্থলের মত পরিবেশ পাবে। উনিশ শ’ সাত সালে ক্যাম্পবল নিজের পকেটের পাঁচ শত ডলার ($৫০০) খরচ করে সান এ্যান্টোনিয় শহরের পরীক্ষামূলক খামারের (US Experimental Farm) কাছে প্রথম ম্যালেরিয়া-নির্মূলকারী এবং পক্ষিমলসার উৎপাদনকারী বাদুড়গৃহ নির্মান করেন (চিত্র-১)। তিনি এই ৩০ ফুট উঁচু দূর্গের নাম দেন “আমার স্মৃতিস্তম্ভ” (“my monument”)। এই বাদুড়দূর্গের ভিতরে তিনি বহু সংখ্যক তাক (shelf) বা বিশ্রাম দাঁড় আড়াআড়ি ভাবে এবং সুপরিকল্পিতভাবে স্থাপন করেন যেখানে বাদুড়েরা থাকবে। এছাড়াও ২০ ফুট পনিরকাপড় (cheesecloth) তিনি বাদুড়ালয়ের ভিতরের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেন। এই পনিরকাপড় আগে থেকেই বাদুড়মল দ্বারা সিক্ত করা ছিল যাতে বাদুড়েরা প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে পারে। এ ছারাও অতিথিদেরকে (অর্থাৎ বাদুড়দেরকে) আকৃষ্ট করার জন্যে তিনি উত্তম মানের হ্যাম (শুকর মাংস) ছোট ছোট টুকরা করে বাদুড়ালয়ে রেখেছিলেন। আর যে পাত্র (hopper, a big bin) তিনি পক্ষিমলসার সংগ্রহ করার জন্যে রেখেছিলেন তার মধ্যে আগে থেকেই ১০০ পাউন্ড বাদুড়বিষ্ঠা রাখা ছিল যাতে বাদুড়েরা এই নির্মিত বাদুড়ালয়কে সহজেই নিজ আবাসস্থল মনে করতে পারে।


কিন্তু বাদুড়েরা এত যত্নের এই গৃহটিও পছন্দ করে নাই; তারা কখনও ক্যাম্পবল এর সেই “বাদুড় হোটেলে” বাসা বাঁধে নাই। উনিশ শ’ দশ সালের বসন্তকালে ক্যাম্পবল তাঁর সঞ্চিত অর্থের আরও অনেক অংশ খরচ করে সেই বাদুড়ালয়ের উন্নয়ন করেন। তাঁর আশা ছিল এইসব উন্নয়নের জন্য বাদুড়েরা শেষ পর্যন্ত সেই বাদুড়গৃহের দিকে আকৃষ্ট হবে - কিন্তু তবুও কোন ফল হয় নাই। মরিয়া হয়ে ক্যাম্পবল অন্য যায়গা থেকে ৫০০ বাদুড় ধরে এনে সেই বাদুড় দূর্গে আটকে রাখেন – এই আশায় যে বন্দী বাদুড়দের চিৎকার চেঁচামেচিতে আকৃষ্ট হয়ে ওই এলাকা দিয়ে চলাচলকারী অন্যান্য বাদুড়েরা দুর্গে ঢুকে পড়বে। কিন্তু সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। দীর্ঘ ছয় বছর পরও ওই ক্যাম্পবল স্মৃতি স্তম্ভে মাত্র ২০০ চড়ুই পাখি ছাড়া আর কিছু বাসা বাঁধে নাই। শেষ পর্যন্ত ওই বাদুড় দুর্গটি ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং তার কাঠগুলো মাত্র $৪৫য়ে বিক্রি করা হয়।

বহু বছরের প্রচেষ্টার পরও বাদুড়দেরকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম না হওয়ার কারণে ডঃ ক্যাম্পবল এতটাই নিরুৎসাহ হয়ে পরেন যে তিনি চিকিৎসা পেশা স্থগিত করেন। এমনকি তিনি তাঁর পরিবার ত্যাগ করে পশ্চিম টেক্সাসের পাহাড়ে পাহাড়ে একাকী সময় কাটাতে থাকেন। বাদুড় দূর্গ নির্মানে কি ভুল হয়ে থাকতে পারে যার জন্যে বাদুড়দেরকে আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না – এ ব্যাপারে তিনি ভাবতে থাকেন। মাসের পর মাস তিনি বিভিন্ন গিরিগুহা পর্যবেক্ষন করতে থাকেন; এ সব গুহার মধ্যে অনেকগুলো ছিল বাদুড় অধ্যুষিত এবং কিছু কিছু ছিল অনধ্যুষিত। শেষ পর্যন্ত তিনি এই উপসংহারে পৌঁছেন যে বাদুড় দুর্গের অবস্থানের জায়গাটাই হল মূল সমস্যা। তিনি পর্য্যবেক্ষন করেন যে, বাদুড়েরা কোন জলাশয়ের কাছের গুহাতে তাদের বাসা বাঁধতে পছন্দ করে। এসময়ে ক্যাম্পবল সান এ্যান্টনিয়তে ফিরে আসেন এই ধারনা নিয়ে যে বাদুড়দের পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট তথ্য আবিষ্কার করেছেন যা কাজে লাগিয়ে নিশ্চিত ভাবে বাদুড়দেরকে আকৃষ্ট করার মত বাদুড়ালয় নির্মান করা সম্ভব হবে।  


সান এ্যান্টনিও শহরের দশ মাইল দক্ষিণে মিচেল’স লেক স্থানটি ডঃ ক্যাম্পবল পছন্দ করেন তাঁর নতুন ও উন্নমিত বাদুড় দুর্গ নির্মানের জন্য। ডঃ ক্যাম্পবল পরে তাঁর বইয়ে লিখেছিলেন, “আর কোন জলাভূমিই এর থেকে নিম্ন মানের হবে না”। (অর্থাৎ বাদুড়দের জন্যে এই জলাভূমিটাকেই তিনি সবচেয়ে আদর্শ জায়গা মনে করেন)। শহরের সকল নর্দমা এই লেকেই নিঃসৃত হত এবং নর্দমা নিঃসৃত বদ্ধ জলাশয়গুলি ছিল মশার বংশ বৃদ্ধির সবচেয়ে সহায়ক জায়গা। মিচেল’স লেক এমন একটি মশকাকীর্ন জায়গা ছিল যে সেখানে কোন ভ্রমণদল এলে, তারা মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পালাতে বাধ্য হত। ভাড়াটিয়া কৃষকরা, যারা লেক পার্শ্ববর্তী ভূমিতে বাস করতেন, বসন্ত কাল থেকে শরৎকাল পর্যন্ত তাদের জীবনও দূর্বিসহ অবস্থায় থাকত। মশাদের এমন বংশবৃদ্ধি হত যে, সময়ে সময়ে কৃষকেরা ওই স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হত; আর পেছনে ফেলে আসা ফসলাদি কেটে তোলার অভাবে ধ্বংস হত। তাদের পালিত পশুরাও দূর্ভোগ পোহাত - গরুরা কৃশকায় হয়ে যেত দুধ দিতে পারত না; আর মুরগিগুলো ফ্যাকাসে হয়ে যেত, ডিম দিতে পারত না। কদাচিৎ কোন পরিবার ম্যালেরিয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেত; এবং প্রতি বছরই দুই চারটি মৃত্যু ঘটত।

উনিশ শ’ এগার সালের বসন্ত কালে মিচেল’স লেকের পাশে ক্যাম্পবলের নতুন বাদুড় দূর্গ নির্মান করা হয়। এই সময়ে ক্যাম্পবল, লেকের চারধারে বসবাসকারী ৮৭ জন শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদেরকে পরীক্ষা করেন – এর মধ্যে ৭৮ জনই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ছিল।
  
ক্যাম্পবলের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে এই নব নির্মিত বাদুড় দূর্গটি বাদুড়দেরকে আকৃষ্ট করতে সফল হবেই এবং সেই বাদুরগুলো মিচেল’স লেকের আশেপাশের কৃষকদের মশা সংক্রান্ত দূর্দশা দূর করবেই। তাই নির্মানের পর বেশ কয়েক মাস ক্যাম্পবল তাঁর নতুন ব্যাট টাওয়ারের দিকে যাওয়া থেকে বিরত ছিলেন। সে বছরের ৪ঠা জুলাই সবাই যখন জাতীয় দিবসের উৎসব পালন করছিল, ক্যাম্পবল সেদিন সারা বিকাল ধরে তাঁর বাদুড় দূর্গ পর্যবেক্ষন করেন। অবশেষে তিনি দেখতে পান সেই বহু প্রতীক্ষিত দৃশ্য – সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে বাদুড়েরা ঝাঁকে ঝাঁকে টাওয়ার থেকে বের হতে থাকে; সবগুলো ঝাঁক বের হতে পূর্ন পাঁচ মিনিট সময় লেগেছিল। পরবর্তি সন্ধ্যাতেও তিনি একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখতে পান। ক্যাম্পবল এর প্রচেষ্টা অবশেষে সাফল্য লাভ করে।

Figure 2. ক্যাম্পবলের প্রথম কার্যকর বাদুড় দূর্গ

এরপর ক্যাম্পবল ভাবলেন তাঁর বাদুড় দূর্গটি ম্যালেরিয়া নির্মূলকারী বাদুড়-বাহিনী দ্বারা ভর্তি করা যায় কিনা, (কারণ, বাদুড়ের সংখ্যা যত বেশি হবে ততই বেশি সংখ্যক মশা বিদূরিত হবে)। বাদুড় দুর্গ থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি শিকার-বীবর (hunting lodge বা শিকারিদের বাসা যা সাধারণত শিকার মওসুমে ব্যবহৃত হয়) ছিল; তিনি লক্ষ্য করেন অফ সিজনে (যখন শিকারিরা সেখানে থাকে না) বাদুড়েরা সেখানে বাসা বাঁধে। ক্যাম্পবল আশেপাশের এই সকল শিকার-বীবর থেকে সমস্ত বাদুড়দেরকে ব্যাট টাওয়ারে ঢোকানোর একটি নতুন উপায় বের করার বুদ্ধি আঁটেন। যেহেতু বাদুড়েরা ধ্বনি শ্রবণের সাহায্যে তাদের খাদ্যের অবস্থান খুঁজে পায়, তিনি অনুমান করেন, “কোন কোন ধ্বনিতে হয়ত বাদুড়েরা উত্যক্ত হয়ে এই শিকার-বীবরগুলি ত্যাগ করবে এবং আর ফিরে আসবে না। আর একবার যদি তারা বুঝতে পারে এই শিকার-বীবরে আর ফিরে আসা যাবে না, তখন ওই নিকটস্থ বাদুড় দূর্গেই তারা ঢুকে পড়বে।” কিন্তু এই অনুমানের একটি খুঁত হল, বাদুড়েরা চার্চের ঘন্টার শব্দে কিছুমাত্র বিব্রত হয় না। তাহলে, ক্যাম্পবল ভাবলেন, এমন কিছু শব্দ নিয়ে পরীক্ষা করতে হবে যা বাদুড়দেরকে ভাগাতে সক্ষম হবে।” তাঁর উৎসাহী বন্ধুদের সহযোগীতায় ক্যাম্পবল শত শত যন্ত্রসংগীতের রেকর্ড নিয়ে পরীক্ষা করেন এবং তার মধ্যে থেকে একটি বেছে নেন। 

সকাল ৪টা থেকে শুরু করে তিনি ওই শিকার-বীবরে “ক্যাসকেড অব রোজেস” নামক ওয়াল্টস রেকর্ডটি বাজাতে থাকেন – যেমনটি কিনা “মেক্সিকো সিটি পুলিশ ব্যান্ড” এ বাজানো হয়ে থাকে। কর্নেট, ক্ল্যারিনেট, পিকোলো (ছোট বাঁশী বিশেষ), ট্রম্বোন, ড্রাম ও করতাল সহযোগে এমন একটি শ্রুতিকটু বেসুরো ধ্বনি-সমগ্র তৈরী করা হয়েছিল যা বাদুড়দেরকে হতচকিত করে ফেলে। সকাল ৫টায় বাদুড়গুলো যখন ফিরে আসছিল তখন তারা এই ধ্বনি গর্জনে হতচকিত হয়ে শিকার-বীবরের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে উড়ছিল এবং এরকম অনেকবার ঘোরার পরে অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে যায়। ক্যম্পবল পরবর্তী সকালেও সেই একই সমবেত যন্ত্র-কূসঙ্গীত বাজাতে শুরু করেন কিন্তু সেদিন আর কোন বাদুড়ের দেখা পাওয়া যায় নাই – অর্থাৎ বাদুড়েরা তাদের আগেরদিনের স্মৃতি মনে রেখে এই শিকার-বীবরের ধারে কাছেও আসে নাই। তখন ক্যাম্পবল আশেপাশের পরিত্যাক্ত অন্যান্য খামার বাড়ীগুলিতেও একই রকম শ্রুতিকটু বেসুরো কন্সার্টের আয়োজন করেন। এইবার তিনি বাদুড়দের ফিরে আসা বন্ধ করার জন্যে ক্যাসকেড অব রোজেস এর পরিবর্তে “দি ফার্স্ট ফর্টিসিমো” কন্সার্ট ব্যবহার করেন।

পরদিন সন্ধ্যাবেলা তিনি তাঁর বাদুড় দুর্গে বাদুড়-বাহিনীর নির্গমন পরীক্ষা করেন। একমাস আগে বাদুড় দুর্গ থেকে সমস্ত বাদুড় বের হতে যেখানে ৫ মিনিট লেগেছিল, এখন সেখানে বিশাল বাদুড়ের ঝাঁক নির্গমন হতে প্রায় দুই ঘন্টা সময় লেগে গেল! ক্যাম্পবল এখন বাদুড়-বাহিনী দ্বারা ম্যালেরিয়া নিরাময় যুদ্ধে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হলেন। পরবর্তি দুই বছর ক্যাম্পবল মাঝে মাঝে সেই বাদুড় দূর্গ পরিদর্শন করতেন। প্রত্যেক বছরই বাদুড়েরা ওই বাদুড়ালয়ে ফিরে আসত এবং তাদের সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ক্যম্পবলের এই পরীক্ষামূলক বাদুড়দেরকে ব্যবহার করে মশা তথা ম্যালেরিয়া দূরীকরনের সাফল্যের সংবাদ ছড়িয়ে পরে। উনিশ শ’ তেরো সালে ইটালি থেকে একটি অনুসন্ধানমূলক চিঠি আসে; সেখানে ঠিকানার জায়গায় লেখা ছিলঃ “বাদুড় পরীক্ষণ কেন্দ্র, টেক্সাস, মেক্সিকো সীমান্ত অঞ্চলের কাছাকাছি।” ওই একই বছরে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার “জনস্বাস্থ্য সেবা” নামে একটি নতুন দফতর খোলেন যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকান জনসাধারণের রোগ প্রতিরোধ করা। আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে সে সময় প্রায় দশ লক্ষ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী ছিল। রস আবিষ্কৃত কৌশল ব্যবহার করে সাউথ ক্যারোলাইনা এবং মিসিসিপিতে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা হয়েছিল। রোনাল্ড রস (Ronald Ross), একজন ব্রিটিশ শল্যচিকিৎশক, আবিষ্কার করেছিলেন যে এ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়ার রোগ জীবাণু বহন করে এবং ছড়ায়। তিনি মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য গতানুগতিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তাঁর পদ্ধতিগুলির মধ্যে ছিল মাটির পানি-নিষ্কাশন, বদ্ধ জলাশয়ে তেল ছিটানো, বসবাসের জন্য ব্যবহৃত দালানগুলির নিয়মিত পরীক্ষা করা, বিছানায় মশারী ব্যবহার করা, এবং ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রুগীদেরকে আলাদা করে রাখা। এর সবগুলিই ব্যয় বহুল।
Figure 3. প্রথম মিউনিসিপ্যাল বাদুর দূর্গ


ইতিমধ্যে ক্যম্পবলের কম ব্যয়বহুল মশা লির্মূল পদ্ধতি ক্রমশই সাফল্য লাভ করছিল। মিচেল’স লেকের বাদুড় দুর্গ নির্মান করার ৪ বছর পর, ১৯১৪ সালে শিকারিরা ক্যাম্পবলকে জানায় যে, তারা এখন সন্ধ্যা হওয়ার পরও সেখানে শিকারের জন্য থাকতে পারে – কারণ মশার উপদ্রব খুবই কম। সে বছর গ্রীষ্মকালে ক্যাম্পবল মিচেল’স লেকের আশেপাশের কৃষকদের কাছ থেকে প্রামান্য সাক্ষ্যপত্র সংগ্রহ করতে শুরু করেন। সকলেই প্রায় রকই রকম বর্ননা দেয়ঃ মশক বাহিনী দূর হওয়ার জন্যে তারা এখন রাত্রি বেলায়ও জমিতে সেচের কাজ চালাতে পারে; তাদের গৃহপালিত পশুরাও সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান; এবং তাদের পরিবারেও কেউ আর রোগাক্রান্ত নয়। যেখানে ৪ বছর আগে ৮৯% ভাগ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী ছিল, সেখানে এখন একজনেরও ম্যালেরিয়া নাই।


ওই একই বছরে, বেক্সার কাউন্টি’র মেডিকেল সোসাইটি ক্যাম্পবল এর কাজকে অনুমোদন করে, এবং ১৯১৪ সালের ৮ই জুন স্যান এ্যান্টোনিও শহরের সিটি কাউন্সিল একটি আইন পাশ করে যাতে শহর পরিধির মধ্যে বাদুড় হত্যা করা সকলের জন্যে বেআইনী ঘোষণা করা হয়। যদি কেউ এই আইন অমান্য করে তাদের জন্যে নিহত বাদুড়প্রতি ৫ থেকে ২০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা ধার্য্য করা হয়। শীঘ্রই স্যান এ্যান্টোনিও পৌরসভা আরেকটি ব্যাট রুষ্ট নির্মানের জন্যে ৩০০০ ডলারের বরাদ্দ ঘোষণা করে। এইটাই হল প্রথম “মিউনিসিপ্যাল বাদুড় দূর্গ।” তাদের দেখাদেখি টেক্সাস স্টেট বোর্ড অব হেলথও ক্যাম্পবল এর পদ্ধতিকে অনুমোদন করে এবং রাজ্য আইনসভার কাছে এ মর্মে সুপারিশ করে যেন সারা টেক্সাসের মধ্যে বাদুড় হত্যা বেআইনি ঘোষণা করে আইন পাশ করা হয়। ১৯১৭ সালের ১০ই মার্চ টেক্সাসের গভর্নর সেই বিলটিকে তাঁর সাক্ষর দ্বারা আইনে পরিণত করেন। প্রথম বাদুড় দুর্গটি এতটাই খ্যাতি লাভ করে যে ক্যম্পবল ওই এলাকা জনসাধারণের প্রদর্শনের জন্যে খুলে দেন। সাধারণের বসার জন্যে পিকনিক বেঞ্চ রাখা হয় যেখানে বসে সন্ধ্যা বেলায় বাদুড় নির্গমনের দৃশ্য সবাই উপভোগ করত। স্যান এ্যান্টোনিয়তে আরও কয়েকটি বাদুড় দূর্গ নির্মান করা হয়। টেক্সাস এবং ইটালি মিলে ক্রমে ক্রমে মোট ১৬টি ব্যাট টাওয়ার নির্মিত হয়। সবচেয়ে শেষেরটি নির্মিত হয় ১৯২৯ সালে। 


১৯২১ সালে মিচেল’স লেকের বাদুড় দূর্গ থেকে সংগৃহীত পক্ষিমলসার (Guano) এর পরিমাণ ছিল ৪,৫৫৮ পাউন্ড। সার হিসাবে এই গুয়ানো উৎকৃষ্ট, কারণ, গুহাবাসী বাদুড়দের গুয়ানোর তুলনায় বাদুড় দূর্গের গুয়ানো ছিল শুষ্ক এবং দ্বিগুণ বেশী নাইট্রোজেন যুক্ত। বাদুড়দের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে গুয়ানোর পরিমাণও বাড়তে থাকে এবং ক্যাম্পবলের পরিসংখ্যানে মিচেল’স লেকের বাদুড়ালয়ে স্বর্বোচ্চ ২৫০,০০০টি বাদুড় বাসা বেঁধেছিল।


Figure 4. বাদু দূর্গ থেকে পক্ষিমলসার (Guano) বহন করার দৃশ্য

১৯১৯ সালে চার্লস ক্যাম্পবলকে নোবেল পুরষ্কারের জন্যে মনোনয়ন করা হয়। স্থানীয় চিকিৎসকেরা এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বাদুড় দূর্গের সুফলাফল সমর্থন করেন। স্যান এ্যান্টোনিয়’র সহকারী-কাউন্টি ডাক্তার (Assistant County Physician), ডঃ ই. এইচ. এলমেনডর্ফ লিখেছিলেন, “… যখন প্রথম মিউনিসিপ্যাল বাদুড় দুর্গ নির্মান করা হয়, আমি তখনই সুনিশ্চিত ছিলাম যে মিচেল’স লেকের দূর্গের মত এটিও এই এলাকায় ভাল ফলাফল দিবে – এবং এই প্রত্যয়ে আমার বিন্দু মাত্রও ভুল হয় নাই। কারণ, মিউনিসিপ্যাল বাদুড় দূর্গই একমাত্র সংস্থা যার বিশাল বাদুড় কলোনি শহরাঞ্চলের ম্যালেরিয়া নির্মূল করেছে।”
পরবর্তি ছয় বছর যাবত ক্যাম্পবল কয়েক মাস পর পর মিচেল’স লেক এলাকার ম্যালেরিয়া অবস্থার পর্যবেক্ষন করেন। তিনি বর্ননা করেন যে, “এই ক্ষুদ্র রহস্যপূর্ন প্রানী, বাদুড়েরা একাই ম্যালেরিয়া নির্মূল করেছে।” ক্যাম্পবল বুঝতে পারেন – ওই এলাকার মশা জন্মানোর এবং প্রবৃদ্ধির পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয় নাই; পরিবর্তন যা হয়েছে তা শুধুমাত্র ওই নির্মিত বাদুড় দূর্গের সংযোজন। ১৯২৫ সালে তাঁর লিখিত “বাদুড়, মশা এবং ডলার” নামক বইতে তিনি সবকিছুর বিস্তারিত বর্ননা দেন।

প্রায় ৩০ বছর যাবত বাদুড়দেরকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ১৯৩১ সালে চার্লস ক্যাম্পবল মৃত্যু বরন করেন। তাঁর বংশধর মিসেস মিল্টন ক্যাম্পবল ১৯৪৮ পর্যন্ত প্রতি বছর ৫০০ ডলার পেতেন ওই মিচেল’স লেকের বাদুড় দূর্গের গুয়ানো বিক্রি থেকে। মিল্টন ক্যাম্পবল আশা করেছিলেন তাঁর মৃত্যুর পর রাজ্য সরকার বাদুড় দূর্গটি সংরক্ষন করবে কারণ, তখনও ওই বাদুড়ালয় পরিদর্শন করার জন্যে প্রত্যেক বছর শত শত প্রকৃতিবিদ ও বাদুড় উৎসাহীরা মিচেল’স লেকে আসত। কিন্তু পরে বাদুড় দূর্গটি আর সেখানে ছিল না। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি টেক্সাসে অত্যধিক জলাতঙ্ক ও মৃগীরোগ এর প্রাদুর্ভাব ঘটে। এসব কারণে বাদুড়কে “সুরক্ষিত প্রজাতি”র তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। যে বাদুড় দূর্গ একসময় সারা পৃথিবীর শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছিল, তা মানব চক্ষুর অগোচরেই বিলুপ্ত হয়ে যায়।
ক্যাম্পবল গর্ব করে বলেছিলেন যে তাঁর বাদুড় দূর্গগুলি শতাব্দী ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে – কিন্তু এখন শুধুমাত্র তিনটি দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে দুইটি টেক্সাসের কোন বেসরকারি সম্পত্তির উপর এবং আরেকটি ফ্লোরিডার সুগারলোফ কী এলাকায় – এই শেষেরটি কখনই বাদুড়দেরকে আকৃষ্ট করতে পারে নাই [2]। ক্যাম্পবল এ দাবী কখনই করেন নাই যে একমাত্র বাদুড় দ্বারাই সকল ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব হবে – তিনি শুধুমাত্র এই দাবী করেছিলেন যে বাদুড় বাহিনী ব্যবহার করে স্বল্প খরচে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এবং উপজাত হিসেবে উতকৃষ্ট মানের প্রাকৃতিক সার ও পাওয়া যাবে।


Figure 5. ফ্লোরিডার সুগারলোফ কী তে আবস্থিত বাদুর দূর্গ। [২]

References

[1]  Murphy, Mari, “Dr. Campbell's "Malaria-Eradicating, Guano-Producing Bat Roosts," Bats Magazine, Volume 7, Issue 2, Summer 1989. Link: http://www.batcon.org/resources/media-education/bats-magazine/bat_article/386?fbclid=IwAR3pjuJTlvnGlt0Mjuryq2_qDuRSi2-qVyOIWAk_PLPWtDSE2325m3BDoXc

[3]   Murphy, Mari, “A Campbell Bat Tower Restoration Project in Texas,” Bats Magazine, Volume 7, Issue 2, Summer 1989. Link: http://www.batcon.org/resources/media-education/bats-magazine/bat_article/387

যোগাযোগ

ফেসবুক থেকে পাওয়া প্রশ্নগুলি ও সংক্ষিপ্ত উত্তর
Nusrat Wara Wahab ব্যাপারটা কি এমন যে বাদুড় থাকলে মশা কমে যায়?

Anis Rahman Yes, bats are natural hunter of the mosquitos. So, more bats mean less mosquitos

Nusrat Wara Wahab প্রশ্নটা এই কারনে করলাম যে আমাদের বাড়ির উল্টাদিকের খালি জায়গায় একটা গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে বাদুর ঝোলে।কিন্তু মশার উৎপাত যে খুব কমে গেছে তেমন নয়।আবার আসেপাশে ট্র্যাশবিন নেই।তাই জানতে চাওয়া।

Anis Rahman Nusrat Wara Wahab good question. One needs to do some research. Will remember your question. However, it seems like there has to be a lot of mosquitos for the bats to detect and attack them. Bats can't see but can recognize things by their ear. They have very well-developed sound sensitivity. So, when sound is reflected from something and comes back to their ears, they can recognize both the nature and location of that thing. This is how they locate the flocks of mosquitos. But if there are too few mosquitos then sound may not reflect back and reach the bats...

Nusrat Wara Wahab oh!! now i got it. thanks for replying.

Afroza Begum বাদুড়ের বিষ্ঠায় নাকি বার্ড ফ্লুর মত মরণ ব্যাধির ভাইরাস থাকে? মশায় ডেঙ্গু, আর বাদুড়ে বার্ড ফ্লু, মানুষ কোনটা রাখবে?

Anis Rahman We want none... Likely to be answered later in the article.

Afroza Begum Anis Rahman Thank you. Curious to know from the article.

Afroza Begum অনুবাদে প্রচলিত বাংলা শব্দ ব্যবহার করলে সুখপাঠ্য হতো।

Anis Rahman ঠিক কোন শব্দগুলো বেমানান মনে হচ্ছে? খুলে বললে সেগুলো ভাল করার চেষ্টা করা যেতে পারে।

Afroza Begum ধন্যবাদ আপনাকেআপনার অনুবাদে, বিদূরিত, শিকার-বীবর, ধ্বনি-সমগ্র, যন্ত্র কূসঙ্গীত, এই শব্দ গুলো অপ্রচলিত বাংলাআরও সহজ ভাষায় বাক্য বিন্যাস করলে লেখাটি সুখ পাঠ্য হতো বলে আমি মনে করি

Anis Rahman ধন্যবাদ আফরোজা। "অ-প্রচলিত" বাংলার ব্যপারে পরে বিবেচনা করা যাবে। আমার কৌতূহল হল, তোমার মতে কোন বিকল্প শব্দগুলি সুখপাঠ্য হত? জবাব দেবার আগে মনে রাখবে, ঐ বাক্যগুলোতে যে ধারনার বর্ননা করা হচ্ছে, সুখপাঠ্যতার স্বার্থে তার অর্থ যেন বদলে না যায়। Afroza Begum

Afroza Begum Anis Rahman আপনার পোষ্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমি পুরো লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়েছি। প্রচলিত শব্দ দিয়ে বাক্য সাজালেও মূল লেখার ধারণা অবিকৃত থাকে, "বাদুড় বহর" লিখেছেন আপনি-- বাংলায় বহর শব্দটি সাধারণত কোন কোন অর্থে ব্যবহৃত হয় অভিধান ছাড়াও আপনি বুঝতে পারবেন। সুখপাঠ্য বলতে আমি সহজবোধ্যতাকেই বুঝিয়েছি, সাবলীল স্বচ্ছন্দে অনুধাবন হয় যে লেখা তাকেই সুখপাঠ্য লেখনী বলা যায়। মূল লেখাকে অনুবাদে রূপ দিতে অনুবাদক প্রচলিত সহজবোধ্য শব্দ অলংকারে সাজিয়ে বাক্য লিখলে অবশ্যই মূল লেখার অর্থবহতা ক্ষুন্ন হবে না। আমি যে শব্দ কয়টি ম্যানশন করেছি তার সমার্থক প্রতিশব্দও রয়েছে, দেখতে পারেন। আপনাকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে আমি মন্তব্যটি করি নি, গঠনমূলক সমালোচনা থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখি, সংশোধন করি। বাংলা নববর্ষের অকৃত্রিম শুভেচ্ছা আপনাকে

Anis Rahman তুমি স্বভাবতই তোমার বিবেচনা অনুযায়ী মন্তব্য প্রকাশ কয়েছ। শেখার পথে এই অনুশীলন ভাল। কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব দাও নাই। অনুমান করেছ আমি বিব্রত হয়েছি, ইত্যাদি। আমি বরং খুশীই হয়েছি, কারণ আর কেউ ত এমন মন্তব্য করে নাই। আমার সহজ প্রশ্ন হল, ওই শব্দগুলির পরিবর্তে তুমি কোন শব্দ ব্যবহার করতে চাও? (সেগুলো যদি যুতসই হয়, তবে আমি ব্যবহার করতেও পারি)

সমাপনী মন্তব্য

Afroza Begum এর মন্তব্যকে আমি গুরুত্ত দিয়েছি। ভাবানুবাদ বা ভাষান্তর করার কাজে আবশ্যই আমি কাঁচা। যথাসাধ্য চেষ্টা করেও অনেক ইংরেজী শব্দের যুতসই বাংলা প্রতিশব্দ খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, cacophony’র বাংলা আভিধানিক অর্থ শ্রুতিকটুতা, কর্কশ শব্দ, ইত্যাদি। কিন্তু এখানে অনেকগুলো যন্ত্র সহযোগে তৈরি cacophony’র বাংলা হিসেবে “বেসুরো ধ্বনি-সমগ্র” আমার কাছে যথাযথ মনে হয়েছে কারণ, শ্রুতিকটুতা, বা কর্কশ শব্দ শুধুমাত্র একটা যন্ত্র দিয়েও করা সম্ভব। আর অন্য জায়গায় এটাকেই “যন্ত্র-কূসঙ্গীত” হিসাবে চালানো হয়েছে (যদিও এটি অভিধান বহির্ভুত)। বিদূরিত নিয়ে আমার বলার কিছু নাই। তবে শিকার-বীবর (hunting lodge) আমার কাছে বেশ যুতসই মনে হয়েছে। বাদুড় বহর” পরিবর্তন করে “বাদুড়-বাহিনী” ব্যবহার করা হয়েছে। 

Comments